বিএনপির আইনের শাসনের বুলি হলো বিচার মানি কিন্তু তালগাছ আমার
মুহম্মদ শফিকুর রহমান
বিএনপি, দলটির নেত্রী ম্যাডাম খালেদা জিয়া এবং অন্য নেত্রী-নেতাদের আইনের শাসনের বুলি হলো- বিচার মানি কিন্তু তালগাছ আমার। কথায় কথায় তারা আওয়ামী লীগকে আইনের শাসন 'অমান্যকারী' গণতন্ত্র 'হরণকারী' আরও কত কত অসুস্থ শব্দ ব্যবহার করে দলটিকে জনগণের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে চলেছে গত তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে। কিন্তু সময়ের কি প্রতিশোধ, আজ তারাই আইনের শাসন মানছে না। ম্যাডাম খালেদা জিয়ার দায়ের করা মামলায়ই হাইকোর্ট রায় দিল তাকে এক মাসের মধ্যে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে। তখনই শুরু হলো মাতম_ হায় তাল গাছ আমার, হায় তালগাছ আমার।
কেন এত মাতম? বস্তুত ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটি হাত ছাড়া হয়ে গেলে তথাকথিত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী দলটির বহুদলীয় গণতন্ত্র বা আইনের শাসনের ওপর থেকে যে মিলিটারি গিলাপটি সরে যাবে। নইলে সরকারের দেয়া গুলশানে প্রায় ৭০/৮০ কোটি টাকা মূল্যের একটি বাড়ি থাকতে কেন তিনি ক্যান্টনমেন্টে বাড়ি ছাড়তে চাইছেন না? অথচ এই ক্যান্টনমেন্টে বসবাসের কারণে তাঁর দলীয় নেতা-কমর্ী-সমর্থকরা তার সাথে দেখা করতে পারেন না। কাজেই এ বাড়ি ছেড়ে গুলশানের বাড়িতে গেলে নেতা-কমর্ীরা তার সাথে সহজেই দেখা করতে পারবেন। কোন বাধার সম্মুখীন হবেন না। আমি নিজেও মনে করি বেগম খালেদা জিয়া গুলশানের বাড়িতে এলে তিনি আর জনবিচ্ছিন্ন ক্যান্টনমেন্টবাসিনী থাকবেন না বরং জনগণের কাছাকাছি চলে আসবেন। সীমাহীন সম্পদের লোভ থাকলে ভিন্ন কথা। অবশ্য দুনিয়াতেও আলস্নাহ পাক-এর বিচার আছে। যাকে আমরা প্রকৃতির প্রতিশোধ মনে করি। মনে পড়ে বাংলাদেশ যখন ক্রিকেটে টেস্ট স্ট্যাটাস-এর জন্য আবেদন করেছিল তখন যে দেশটি সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা করেছিল, বলেছিল 'বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটের অযোগ্য, আমাদের চরমভাবে অবজ্ঞা করেছিল, সেই নিউজিল্যান্ডেরই স্ট্যাম্পগুলো একে একে উড়ে গেল টাইগারদের অপ্রতিরোধ্য বোলিং-এ। দাম্ভিক নিউজিল্যান্ডিয়ানরা অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখল শুধু। কেবল যে স্ট্যাম্পগুলো উড়ে গেল তা নয়, সিরিজ জয় এল টাইগারদের ঘরে তাও নয়, একেবারে যাকে বলে লাইফবয় সাবান দিয়ে হোয়াইট ওয়াশ করে বুঝিয়ে দিল, দাদারা আমাদেরও দিন ছিল, কেবল সময়ের অপেক্ষা এবং সেই সময়ও এমনভাবে এল যে, একেবারে চুনকাম করে পলিশ করে দিল, দাদারা ভাবতেও পারল না। এরই নাম রয়েল বেঙ্গল টাইগার, এরই নাম প্রকৃতির প্রতিশোধ। মনে পড়ে ২০০১ সালের অক্টোবর নির্বাচনের পর সরকার গঠনের শপথ গ্রহণেরও অপেক্ষা করেনি। বিএনপি-জামায়াতীরা যেই দেখল জিতে গেছে অমনি ঝাঁপিয়ে পড়ল আওয়ামী লীগ নেতাকমর্ী এবং সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের জনগণের ওপর। মানুষের বাড়ি বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হানা দিয়ে লুটপাট, মারধর, হামলা-মামলা, এমনকি নারী নির্যাতনের মতো জঘন্য অপরাধ করা শুরম্ন করল। সেই বিভীষিকাময় কালো দিনগুলোর কথা মনে পড়লে আজও শিউরে উঠতে হয়। কে না জানে জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করেও যখন দেখল দুই কন্যা বেঁচে আছেন তখন হত্যাকারীরা স্বসত্মি পেল না। ৬ বছর পর দেশে ফিরে এলে শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য বার বার আঘাত হেনেছে। গুলি, বোমা, এমনকি ধানম-ি ৫ নং সড়কের বাসভবনে পর্যনত্ম গুলি ছুড়েছে। তাই ১৯৯৬-২০০১-এর আওয়ামী লীগ সরকার শেখ হাসিনার জীবনের নিরাপত্তা জন্য গণভবনটি বসবাসের জন্য দেন। একই সঙ্গে শেখ রেহনাকেও ধানম-িতে একটি বাড়ি বরাদ্দ দেন। ২০০১-এর নির্বাচনে জেতার পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার জন্য বরাদ্দকৃত বাসবভন দু'টির বরাদ্দ বাতিল করে দেয়। শেখ রেহানা তো তখনও বাড়িতে ওঠেনইনি। শেখ হাসিনাও সঙ্গে সঙ্গে গণভবন ছেড়ে স্বামীর বাড়ি ধানম-ি ৫ নং সড়কে চলে যান। সেদিন আমরা যারা দূর থেকে শেখ হাসিনার গণভবন ছেড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখেছি অনেকের মুখেই কোন কথা ছিল না, চোখে ছিল জল। এভাবে অপমান সহ্য করে শেখ হাসিনাকেও গণভবন ছাড়তে হয়েছিল। কেউ কেউ বলছেন শেখ হাসিনা প্রতিশোধ নিচ্ছেন! না, শেখ হাসিনা নিচ্ছেন না, এ প্রকৃতির প্রতিশোধ। একজন নারী যিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার বা রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের স্ত্রী। সেই সুবাদে তাঁকে নগদ ১০ লাখ টাকা, জ্বালানি, চালকসহ গাড়ি, দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচ বাবদ মাসে মাসে টাকা, অর্থাৎ সব কিছু ফ্রি করে দেয়ার পরও প্রথমে থাকার জন্য ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটি দেয়া হয় সম্ভবত ১০১ টাকার বিনিময়ে। পরে ক্যান্টনমেন্টে বাড়ি ছেড়ে দেয়ার শর্তে গুলশানে এক অথবা দেড় বিঘার ওপর নির্মিত বাড়ি দেয়া হয়। এই বাড়ি বেগম জিয়ার কাছে হসত্মানত্মরের আগে রীতিমতো খোলনলচে পাল্টে সুসজ্জিত করে তবেই হসত্মানত্মর করা হয়। খাট, পালং থেকে শুরম্ন করে চা-এর চামচ পর্যনত্ম সবকিছু দিয়ে তারপর হসত্মানত্মর করা হয় এবং এতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয় তা দিয়ে একটি বাড়ি বানানো যেত। কিন্তু বেগম জিয়া এবার দু'টি বাড়িই দখলে নেন। একটা কথা বলা দরকার_ শুনেছি ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটি না কি এক শত ৬৫ কাঠা অর্থাৎ সোয়া ৮ বিঘা। এদিক থেকে গুলশানের বাড়িটির বর্তমান বাজার দর ৭০/৮০ কোটি টাকা এবং ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটির দাম ৩০০-৪০০ কোটি টাকাও হতে পারে। বেগম জিয়ার দুটি বাড়ি দখলের ব্যাপারে পুরনো বহুল কথিত একটি গল্পের কথা মনে পড়ে গেল। সেকালে অর্থাৎ গত শতাব্দীর শেষার্ধ পর্যনত্ম বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু মানুষকে দেখা যেত যারা বড় কাছারিঅলা বাড়ি দেখলে (সন্ধ্যার আগে আগে) ঢুকে পড়ত এবং মুসাফির পরিচয় দিয়ে রাত্রিযাপনের ইচ্ছে প্রকাশ করত। এরা সাধারণত নোয়াখালী অঞ্চল থেকে বেশি আসত। একবার এক গেরসত্মবাড়িতে এসে একজন মুসাফির থাকার অনুমতি পেল। রাতের খাবারের সময় বাড়ির কর্তা এসে জানতে চাইলেন, আপনি পরোটা-মাংস খাবেন, না ভাত-মাছ_ কোন্টা। মুসাফির একটু ভেবে বললেন, দুইটাই, আগে পরোটা-মাংস খাব পরে ভাত-মাছ। বেগম জিয়ার জন্মও শুনেছি ঐ অঞ্চলেই এবং সেই সুবাদে তিনি গল্পটা নিশ্চয়ই শুনেছিলেন। প্রশ্ন হলো জিয়া মুক্তিযোদ্ধা (সেক্টর কমান্ডার) ছিলেন বা রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন সে জন্য তাঁর বিধবা স্ত্রীকে ও এতিম সনত্মানদের থাকার জন্য বাড়ি দেয়া হলো। তাদের ভাষায় জিয়া না কি স্বাধীনতার ঘোষক ছিলেন, আমরা বলি এটি অর্ধসত্য, পুরো সত্য হলো জিয়া বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে পাঠ করেছিলেন। অর্থাৎ তিনি অন্যতম ঘোষণা পাঠক। সে যা হোক এসব অবদানের জন্য তাঁর বিধবা স্ত্রী ও সনত্মানদের এত কিছু দেয়া হলো। আমরা কি প্রশ্ন করতে পারি শেখ মুজিব ছিলেন বাঙালী জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সনত্মান। বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা, আমাদের সুদীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক নেতা, পথপ্রদর্শক, বাঙালীর জাতি রাষ্ট্রের স্রষ্টা, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, জাতির জনক ও বঙ্গবন্ধু, তাঁকে হত্যার পর পরিবারের একমাত্র জীবিত এতিম দুই কন্যার জন্য কি করা হয়েছিল? বঙ্গবন্ধুর বাড়ি দু'টিই (ধানম-ি ও টুঙ্গিপাড়া) দু'বোন জনগণের উদ্দেশ্যে দান করেছেন। তাঁরা দু' বোন বিদেশে ছিলেন বলে বেঁচে গেছেন। বরং জিয়া তাদের দেশে আসতে দেয়নি। বারে বারে শেখ হাসিনাকে হত্যা করারও ষড়যন্ত্র হয়।
কেন এত মাতম? বস্তুত ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটি হাত ছাড়া হয়ে গেলে তথাকথিত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী দলটির বহুদলীয় গণতন্ত্র বা আইনের শাসনের ওপর থেকে যে মিলিটারি গিলাপটি সরে যাবে। নইলে সরকারের দেয়া গুলশানে প্রায় ৭০/৮০ কোটি টাকা মূল্যের একটি বাড়ি থাকতে কেন তিনি ক্যান্টনমেন্টে বাড়ি ছাড়তে চাইছেন না? অথচ এই ক্যান্টনমেন্টে বসবাসের কারণে তাঁর দলীয় নেতা-কমর্ী-সমর্থকরা তার সাথে দেখা করতে পারেন না। কাজেই এ বাড়ি ছেড়ে গুলশানের বাড়িতে গেলে নেতা-কমর্ীরা তার সাথে সহজেই দেখা করতে পারবেন। কোন বাধার সম্মুখীন হবেন না। আমি নিজেও মনে করি বেগম খালেদা জিয়া গুলশানের বাড়িতে এলে তিনি আর জনবিচ্ছিন্ন ক্যান্টনমেন্টবাসিনী থাকবেন না বরং জনগণের কাছাকাছি চলে আসবেন। সীমাহীন সম্পদের লোভ থাকলে ভিন্ন কথা। অবশ্য দুনিয়াতেও আলস্নাহ পাক-এর বিচার আছে। যাকে আমরা প্রকৃতির প্রতিশোধ মনে করি। মনে পড়ে বাংলাদেশ যখন ক্রিকেটে টেস্ট স্ট্যাটাস-এর জন্য আবেদন করেছিল তখন যে দেশটি সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা করেছিল, বলেছিল 'বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটের অযোগ্য, আমাদের চরমভাবে অবজ্ঞা করেছিল, সেই নিউজিল্যান্ডেরই স্ট্যাম্পগুলো একে একে উড়ে গেল টাইগারদের অপ্রতিরোধ্য বোলিং-এ। দাম্ভিক নিউজিল্যান্ডিয়ানরা অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখল শুধু। কেবল যে স্ট্যাম্পগুলো উড়ে গেল তা নয়, সিরিজ জয় এল টাইগারদের ঘরে তাও নয়, একেবারে যাকে বলে লাইফবয় সাবান দিয়ে হোয়াইট ওয়াশ করে বুঝিয়ে দিল, দাদারা আমাদেরও দিন ছিল, কেবল সময়ের অপেক্ষা এবং সেই সময়ও এমনভাবে এল যে, একেবারে চুনকাম করে পলিশ করে দিল, দাদারা ভাবতেও পারল না। এরই নাম রয়েল বেঙ্গল টাইগার, এরই নাম প্রকৃতির প্রতিশোধ। মনে পড়ে ২০০১ সালের অক্টোবর নির্বাচনের পর সরকার গঠনের শপথ গ্রহণেরও অপেক্ষা করেনি। বিএনপি-জামায়াতীরা যেই দেখল জিতে গেছে অমনি ঝাঁপিয়ে পড়ল আওয়ামী লীগ নেতাকমর্ী এবং সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের জনগণের ওপর। মানুষের বাড়ি বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হানা দিয়ে লুটপাট, মারধর, হামলা-মামলা, এমনকি নারী নির্যাতনের মতো জঘন্য অপরাধ করা শুরম্ন করল। সেই বিভীষিকাময় কালো দিনগুলোর কথা মনে পড়লে আজও শিউরে উঠতে হয়। কে না জানে জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করেও যখন দেখল দুই কন্যা বেঁচে আছেন তখন হত্যাকারীরা স্বসত্মি পেল না। ৬ বছর পর দেশে ফিরে এলে শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য বার বার আঘাত হেনেছে। গুলি, বোমা, এমনকি ধানম-ি ৫ নং সড়কের বাসভবনে পর্যনত্ম গুলি ছুড়েছে। তাই ১৯৯৬-২০০১-এর আওয়ামী লীগ সরকার শেখ হাসিনার জীবনের নিরাপত্তা জন্য গণভবনটি বসবাসের জন্য দেন। একই সঙ্গে শেখ রেহনাকেও ধানম-িতে একটি বাড়ি বরাদ্দ দেন। ২০০১-এর নির্বাচনে জেতার পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার জন্য বরাদ্দকৃত বাসবভন দু'টির বরাদ্দ বাতিল করে দেয়। শেখ রেহানা তো তখনও বাড়িতে ওঠেনইনি। শেখ হাসিনাও সঙ্গে সঙ্গে গণভবন ছেড়ে স্বামীর বাড়ি ধানম-ি ৫ নং সড়কে চলে যান। সেদিন আমরা যারা দূর থেকে শেখ হাসিনার গণভবন ছেড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখেছি অনেকের মুখেই কোন কথা ছিল না, চোখে ছিল জল। এভাবে অপমান সহ্য করে শেখ হাসিনাকেও গণভবন ছাড়তে হয়েছিল। কেউ কেউ বলছেন শেখ হাসিনা প্রতিশোধ নিচ্ছেন! না, শেখ হাসিনা নিচ্ছেন না, এ প্রকৃতির প্রতিশোধ। একজন নারী যিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার বা রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের স্ত্রী। সেই সুবাদে তাঁকে নগদ ১০ লাখ টাকা, জ্বালানি, চালকসহ গাড়ি, দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচ বাবদ মাসে মাসে টাকা, অর্থাৎ সব কিছু ফ্রি করে দেয়ার পরও প্রথমে থাকার জন্য ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটি দেয়া হয় সম্ভবত ১০১ টাকার বিনিময়ে। পরে ক্যান্টনমেন্টে বাড়ি ছেড়ে দেয়ার শর্তে গুলশানে এক অথবা দেড় বিঘার ওপর নির্মিত বাড়ি দেয়া হয়। এই বাড়ি বেগম জিয়ার কাছে হসত্মানত্মরের আগে রীতিমতো খোলনলচে পাল্টে সুসজ্জিত করে তবেই হসত্মানত্মর করা হয়। খাট, পালং থেকে শুরম্ন করে চা-এর চামচ পর্যনত্ম সবকিছু দিয়ে তারপর হসত্মানত্মর করা হয় এবং এতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয় তা দিয়ে একটি বাড়ি বানানো যেত। কিন্তু বেগম জিয়া এবার দু'টি বাড়িই দখলে নেন। একটা কথা বলা দরকার_ শুনেছি ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটি না কি এক শত ৬৫ কাঠা অর্থাৎ সোয়া ৮ বিঘা। এদিক থেকে গুলশানের বাড়িটির বর্তমান বাজার দর ৭০/৮০ কোটি টাকা এবং ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটির দাম ৩০০-৪০০ কোটি টাকাও হতে পারে। বেগম জিয়ার দুটি বাড়ি দখলের ব্যাপারে পুরনো বহুল কথিত একটি গল্পের কথা মনে পড়ে গেল। সেকালে অর্থাৎ গত শতাব্দীর শেষার্ধ পর্যনত্ম বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু মানুষকে দেখা যেত যারা বড় কাছারিঅলা বাড়ি দেখলে (সন্ধ্যার আগে আগে) ঢুকে পড়ত এবং মুসাফির পরিচয় দিয়ে রাত্রিযাপনের ইচ্ছে প্রকাশ করত। এরা সাধারণত নোয়াখালী অঞ্চল থেকে বেশি আসত। একবার এক গেরসত্মবাড়িতে এসে একজন মুসাফির থাকার অনুমতি পেল। রাতের খাবারের সময় বাড়ির কর্তা এসে জানতে চাইলেন, আপনি পরোটা-মাংস খাবেন, না ভাত-মাছ_ কোন্টা। মুসাফির একটু ভেবে বললেন, দুইটাই, আগে পরোটা-মাংস খাব পরে ভাত-মাছ। বেগম জিয়ার জন্মও শুনেছি ঐ অঞ্চলেই এবং সেই সুবাদে তিনি গল্পটা নিশ্চয়ই শুনেছিলেন। প্রশ্ন হলো জিয়া মুক্তিযোদ্ধা (সেক্টর কমান্ডার) ছিলেন বা রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন সে জন্য তাঁর বিধবা স্ত্রীকে ও এতিম সনত্মানদের থাকার জন্য বাড়ি দেয়া হলো। তাদের ভাষায় জিয়া না কি স্বাধীনতার ঘোষক ছিলেন, আমরা বলি এটি অর্ধসত্য, পুরো সত্য হলো জিয়া বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে পাঠ করেছিলেন। অর্থাৎ তিনি অন্যতম ঘোষণা পাঠক। সে যা হোক এসব অবদানের জন্য তাঁর বিধবা স্ত্রী ও সনত্মানদের এত কিছু দেয়া হলো। আমরা কি প্রশ্ন করতে পারি শেখ মুজিব ছিলেন বাঙালী জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সনত্মান। বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা, আমাদের সুদীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক নেতা, পথপ্রদর্শক, বাঙালীর জাতি রাষ্ট্রের স্রষ্টা, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, জাতির জনক ও বঙ্গবন্ধু, তাঁকে হত্যার পর পরিবারের একমাত্র জীবিত এতিম দুই কন্যার জন্য কি করা হয়েছিল? বঙ্গবন্ধুর বাড়ি দু'টিই (ধানম-ি ও টুঙ্গিপাড়া) দু'বোন জনগণের উদ্দেশ্যে দান করেছেন। তাঁরা দু' বোন বিদেশে ছিলেন বলে বেঁচে গেছেন। বরং জিয়া তাদের দেশে আসতে দেয়নি। বারে বারে শেখ হাসিনাকে হত্যা করারও ষড়যন্ত্র হয়।
বঙ্গবন্ধু তো রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টও ছিলেন। সে বিষয়টিও তো বিবেচনায় আনা হয়নি। খন্দকার দেলোয়ার কিংবা মীর্জা ফখরম্নল কি বললেন না বললেন সে সব তত গুরম্নত্বপূর্ণ নয়, কিন্তু স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরম্নল ইসলাম খান (সিপিবির সভাপতি মনজুরম্নল আহসান খানের ভাই) যখন বলেন, ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটির সাথে আবেগ জড়িত আছে। এ আবেগের অর্থ আমরা বুঝতে পারলাম না। নজরম্নল ইসলাম খান যদি একটু ব্যাখা করে বলেন তাহলে ভাল হয়।
যদি বলা হয় খালেদা জিয়াকে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসেবে বাড়ি দু'টি দেয়া হয়েছে। এখানেও প্রশ্ন, বঙ্গবন্ধুর দুই পুত্র শেখ কামাল ও শেখ জামাল দু'জনই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। শেখ কামাল মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে বাংলাদেশ আর্মির কমিশন রেঙ্ক-এ যোগ দেন এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি (তখন) কর্নেল এমএজি ওসমানীর এডিসি ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধ শেষে বাংলাদেশ আর্মির ক্যাপ্টেন হিসেবে অবসর নিয়ে অসমাপ্ত শিক্ষা (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞানে বি.এ. অনার্স ও এম.এ. কোর্স) সমাপ্ত করেন এবং শিল্প-সংস্কৃতি-ক্রীড়া ও রাজনীতির অঙ্গনে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। আর শেখ জামালও একইভাবে বাংলাদেশ আর্মির কমিশনও প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীনতার পর ইংল্যান্ডের বিখ্যাত সেন্ডহাস্ট থেকে প্রশিক্ষণ ও কমিশন নিয়ে আর্মিতে ফিরে যান। তাঁকেও হত্যা করা হয়েছিল সস্ত্রীক। এখানে কি আবেগের জায়গা নেই। তাদের দু'বোন তো জীবিত ছিলেন। ধরে নিলাম ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ও লেফ্টেন্যান্ট শেখ জামালের বিয়ে হয়েছিল এক মাস হয় এবং এরই মধ্যে তাঁদেরও হত্যা করা হয়। তবে কর্নেল তাহের, জেনারেল খালেদ মোশাররফ, জেনারেল মনজুর, কর্নেল হুদা, কর্নেল হায়দারদের হত্যার পর তাদের স্ত্রী সনত্মানরা বেঁচে আছেন। তাদের ব্যাপারে কি আবেগ কাজ করে না প্রিয় নজরম্নল ইসলাম খান ভাই?
তবে হঁ্যা এবার কিন্তু ভাল ধরা খেয়েছে বিএনপি। আওয়ামী লীগ যদি হাইকোর্টের মামলাটি করত বা আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাহী আদেশে বাড়ি ছাড়তে বলতেন তাহলে বিএনপি কিছুটা হলেও রাজনৈতিক ফায়দা পেত। কিন্তু এক্ষেত্রে সে সুযোগও নেই। বেগম জিয়াই হাইকোর্টে মামলাটি করেছেন বাড়ি রক্ষার জন্য। হাইকোর্ট তার মামলাটি খারিজ করে দিয়েছে এবং তাঁকে এক মাসের মধ্যে বাড়ি ছাড়তে নির্দেশ দিয়েছেন। এখানে বেগম জিয়াকে হয় হাইকোর্টের রায়ের বিরম্নদ্ধে আপীল করতে হবে আপীল বিভাগে নয়ত হাইকোর্ট তথা বিচার বিভাগের বিরম্নদ্ধে রাজপথে নামতে হবে। কিন্তু রাজপথে নামা যে সম্ভব নয় এটা বুঝতে পেরে বেগম খালেদা জিয়ার আইনজ্ঞ ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ডুব মেরেছেন। তাঁর কোন কথা শোনা যাচ্ছে না। না-কি আকীদা বদলানোর চেষ্টায় আছেন কে জানে? মওদুদ আহমেদের কথাইবা বলব কেন, টিএইচ খানও তেমন কোন মনত্মব্য করছেন না, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ওরফে সাকা চৌধুরীও কৌশল অবলম্বন করে আর্মির ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। তবে মাঠে নেমেছেন খালেদা জিয়ার নব্য আইন উপদেষ্টা সুপ্রীমকোর্ট বার সভাপতি এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। তিনিও খানিক পাশ কাটিয়ে বলেছেন আদালতের বাইরে বিষয়টি মীমাংসা হতে পারে। তার বক্তব্যে আন্দোলনের ব্যাপার নেই, আছে সালিশীর ব্যাপার। আমার বোঝাটা যদি ঠিক হয় তবে তার কথার অর্থ হলো সরকারী-বিরোধী দল বসে বিষয়টি সুরাহা করতে পারে। অর্থাৎ গ্রাম্য সালিশ। যা টাউটরা পরিচালনা করে এবং কখনও কখনও পয়সার বিনিময়ে ফতোয়া দেয়, কখনও দু'পক্ষের কাছ থেকে টাকা খেয়ে বছরের পর বছর গ্রাম্য কাজিয়া জিইয়ে রাখে। খন্দকার মাহবুব সাহেব কি তাই চান? সালিশ হলে বছরের পর বছর জিইয়ে রাখার একটা সুযোগ আসবে এবং বারের সভাপতি হিসেবে তিনি ভূমিকা রাখতে পারবেন, হয়ত তিনি তাই ভাবছেন। গ্রাম্য সালিশের মতো দু'পক্ষের কাছ থেকে টাকা খাবেন, এ কথা আমি বলছি না।
খন্দকার মাহবুব সাহেব আরও যে কথা বলেছেন তা হলো 'আওয়ামী লীগ বা আওয়ামী লীগ সরকার আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে চায়। তার এ বক্তব্য আদালত অবমাননা কি-না সে আইনজীবী হিসেবে তিনিই বলতে পারেন। আমরা সাধারণ মানুষ হিসেবে বুঝি কোন দল বা সরকার যখন আদালতকে প্রভাবিত করতে পারে বা আদালতকে দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে পারে, তখন সে আদালত কি আদালত থাকে? আমরা জানি আদালত কেবল আইন বা রাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী চলে, কারও কাছে দায়বদ্ধ নয়, কারও ইচ্ছা-অনিচ্ছায়ও আদালত চলে না। তারপরও খন্দকার মাহবুবের মতো একজন প্রবীণ আইনজীবী কিভাবে এমন বালখিল্য কথা বলেন বুঝি না।
খন্দকার মাহবুব হোসেন আরও বলেছেন, "খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ির বিষয়টি অত্যনত্ম স্পর্শকাতর। এটি জিয়াউর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি।" তাহলে বাংলাদেশের সব বাড়িই তো কারও না কারও স্মৃতিবিজড়িত। তাহলে কি তাদের সবার মৃতু্যর পর তাদের বিধবা স্ত্রী বা এতিম সনত্মানদের নামে সে সব বাড়ি লিখে দিতে হবে? তাহলে তো সরকারী কাজকর্মের জন্য আর কোন বাড়িই অবশিষ্ট থাকবে না।
বরং আমি মনে করি বঙ্গবন্ধু হত্যার ব্যাপারে সম্পৃক্ততা, হত্যাকারীদের দায়-মুক্তি দান ও বিদেশী দূতাবাসে বড় বড় চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা, দেশে সামরিক শাসন স্থায়ী করা, গোপন বিচারে কর্নেল তাহেরের হত্যা, যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে বাংলাদেশে থাকতে দেয়া, জামায়াতের মতো ঘৃণ্য-জঘন্য যুদ্ধাপরাধী দলকে রাজনীতি করার অধিকার দান এবং সর্বোপরি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসন করা এবং লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনা ও মূল্যবোধের ধারা থেকে পাকি সামপ্রদায়িক ধারায় নিয়ে যাওয়া, এসব রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধের জন্য জিয়ার মরণোত্তর বিচার হওয়া উচিত। দেশের আজকের যে দুর্ভোগ, আশানুরূপ অগ্রগতি সাধনে ব্যর্থতা এবং সবার ওপরে একটি দেশপ্রেমিক প্রশাসন গড়ে তুলতে না পারা_ এসব কিছুর জন্য দায়ী ঐ জিয়াউর রহমান। এই ভদ্রলোকই গড়হবু রং হড় ঢ়ৎড়নষবস বলে দেশের সমাজ, রাজনীতি, প্রশাসন সর্বক্ষেত্রে ঘুষ-দুনর্ীতিকে উৎসাহিত করেছেন। এই ভদ্রলোকই মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের হাতে অর্থ, অস্ত্র, পানীয় তুলে দিয়ে (হিজবুল বাহার) ছাত্র রাজনীতিতে সুস্থ ধারার চর্চা করার পথ রম্নদ্ধ করে দিয়ে গেছেন। বস্তুত সামরিক শাসকরা এমনই হয়। আইয়ুব-ইয়াহিয়া বা জিয়া-এরশাদকে দেখেছি। কারও সাথে কারও কোন গরমিল দেখেছি বলে মনে পড়ে না।
আমি মনে করি বঙ্গবন্ধু হত্যার পর পাকিপন্থী, স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী রাজাকার-আলবদর-আলশামস বা ভাসানী ন্যাপের যে অংশটি স্বাধীনতা অর্জনে ভূমিকা রাখতে না পারার কারণে না ঘরকা না ঘাটকা ছিল, জিয়াকে ঘিরে তারা যে এক অশুভ রাজনৈতিক বলয় সৃষ্টি করার সুযোগ পেল এবং পরবতর্ীতে জিয়া হত্যার পর আরও যারা জিয়ার সেই মিলিটারি ইমেজের চাদর জড়িয়ে খালেদা জিয়াকে ঘিরে সেই বলয় রক্ষা করছে, জিয়ার মরণোত্তর বিচার হলে তাদের সেই অশুভ বলয়ও ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাবে। বাংলাদেশ তার মূল ধারায় অগ্রসর হতে থাকবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এ পথেই পরিবর্তনের সূচনা করেছেন, এগিয়ে চলেছেন।
একজন মানুষের কত সম্পদ চাই, কত জমি চাই? তাঁকে তো গুলশানে একটা বাড়ি দেয়া হয়েছে। সেটিও ছোট নয়। তার দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান তো শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে। মানুষের মুখে মুখে চলছে এসব মহাজনী বাণী। কারও কারও মতে হাজার কোটি টাকাও হতে পারে। স্ত্রী-সনত্মানসহ দুই ভাইয়ের লন্ডন ব্যাঙ্ককে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে অবস্থান অথবা চিকিৎসার জন্য থাকার ব্যাপারটা চিনত্মা করলেই তো অনুমান করা যায়।
বস্তুত একটি জনগোষ্ঠী যখন মূলধারা থেকে বিচু্যত হয় তখন তার আর মূল্যবোধ বলে কিছু থাকে না। আমরা কেবল খাই খাই চাই চাই-এর বাইরে কিছু ভাবি না। মহর্ষি টলসত্ময়ের সেই বিখ্যাত ঐড় িসঁপয ষধহফ ফড়বং ধ সধহ ৎবয়ঁরৎব গল্পটির কথা মনে পড়ে গেল। এক লোক কেবল জমি চাচ্ছে। তখন তাকে একটি ঘোড়ার পিঠে চড়িয়ে বলা হলো, এ ঘোড়া সূর্যাসত্ম পর্যনত্ম যতখানি ভূমি অতিক্রম করতে পারবে সবটাই তোমার। কথা মতো লোকটির ঘোড়া দৌড়োতে লাগল, দৌড়োতে দৌড়োতে সূর্যাসত্মের মুহূর্তে লোকটি ঘোড়া থেকে পড়ে গেল এবং মারা গেল। এবং তখন তার প্রয়োজন পড়ল মাত্র সাড়ে তিন হাত জমিন।
ঢাকা-২১ অক্টোবর, ২০১০
লেখক_ ফ্রি-ল্যান্স সাংবাদিক
No comments:
Post a Comment